শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৫ পূর্বাহ্ন

আপডেট
সম্পদে পিছিয়ে নেই সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াও

সম্পদে পিছিয়ে নেই সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াও

সম্পদে পিছিয়ে নেই সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াও

শায়লা জামান ,নিজস্ব প্রতিবেদক : সম্পদে পিছিয়ে নেই সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াও। তিনিও সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের মতো তিনিও শুধু নিজের নামেই নয়; স্ত্রী, দুই ছেলে ও মেয়ের নামে বিপুল সম্পত্তি গড়েছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পূর্বাচলের নিউ টাউনের ১ নম্বর সেক্টরের ৪০৬/বি রোড। এখানে ১০ কাঠা জমি রয়েছে আছাদুজ্জামান মিয়ার নামে। পূর্বাচলের এই প্লটের প্রতি কাঠা জমির মূল্য এক কোটি টাকারও বেশি।

এছাড়া, পূর্বাচলের সেক্টর ৮, রোড ১০৮-এ ৫২ নম্বর প্লটটি আছাদুজ্জামানের স্ত্রীর নামে ছিল। ৫ কাঠার এই প্লটটি তিনি বাজার দরে বিক্রি করে দিয়েছেন। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল ব্লকের লেন-১ এ ১৬৬ এবং ১৬৭ নম্বরে ১০ কাঠার উপর ৬ তলাবিশিষ্ট আলিশান বাড়িটি তার স্ত্রীর নামে। যা স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাড়িটি বর্তমানে ভাড়া দেয়া। বাড়িটির বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। আফতাবনগর ৩ নম্বর সেক্টরের, এইচ ব্লকের ৮ নম্বর রোডের ৩৬ নম্বর প্লটে ২১ কাঠা জমি রয়েছে। এই প্লটটিও আছাদুজ্জামান মিয়ার। এই প্লটটি ৮ নম্বর রোডের সবচেয়ে বড় প্লট। নিকুঞ্জ-১ এর ৮/এ রোডের ৬ নম্বর বাড়িটি আছাদুজ্জামান মিয়ার ছোট ছেলে আসিফ মাহাদীনের নামে। বাড়িটির মূল্য ১০ কোটি টাকার বেশি।

সিদ্ধেশ্বরী রূপায়ন স্বপ্ন নিলয় ৫৫/১-এর বহুতল ৩ নম্বর ভবনে ৩ হাজার ৮শ’ থেকে ৪ হাজার স্কয়ার বর্গফিটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে আছাদুজ্জামান মিয়ার মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকার নামে। ইস্কাটন গার্ডেন ১৩/এ প্রিয়নীড়ে আছাদুজ্জামানের স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ধানমণ্ডির ১২/এ সড়কের ৬৯ নম্বর বাড়ির বি/২/৫ ভবনে যোগাযোগ করে জানা যায় ভবনটিতে এককাঠা জমিসহ আছাদুজ্জামান মিয়ার পরিবারের সদস্যদের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এখানে ফ্ল্যাটের মূল্য ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে ভবনটির সংস্কার কাজ চলছে। এছাড়া, আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে ঢাকা, ফরিদপুর ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জমির সন্ধান মিলেছে।

২০১৮ সালে তিনি রাজউক থেকে একটি প্লট বিশেষ কোটায় বরাদ্দ পান। অথচ রাজউকের নীতিমালা অনুযায়ী, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের প্লট বরাদ্দ পাওয়ার সুযোগ নেই।  ঢাকার গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার চাঁদখোলা মৌজায় আফরোজা জামানের নামে ৪১ শতাংশ জমি রয়েছে। যা কেনা হয়েছে ২০১৭ সালে। একই মৌজায় একই বছরের ১৬ই নভেম্বর তার নামে কেনা হয় আরও ২৬ শতাংশ জমি। একই মৌজায় তার নামে ২০১৯ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি কেনা হয় আরও ৩৯ শতাংশ জমি।

আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রীর নামে ২০২০ সালে জোয়ার সাহারা মৌজায় ৫ কাঠা জমি কেনা হয়। একই বছরে একই মৌজায় কেনা হয় ১০ কাঠা জমি। একই বছরে গাজীপুরের চাঁদখোলা মৌজায় ৩১ শতক জমি ক্রয় করেন আফরোজা।
এ ছাড়া আফরোজা ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কৈয়ামসাইল- কায়েতপাড়া মৌজায় দশমিক ২৮ একর জমি কেনেন। একই বছরে একই মৌজায় আরও ৩২ শতক জমি কেনেন তিনি। ওই বছরই রূপগঞ্জের কৈয়ামসাইল-কায়েতপাড়া মৌজায় দশমিক ৬০ একর জমি তার নামে কেনা হয়। পরে তা বিক্রি করে দেয়া হয়। এ ছাড়াও ২০১৯ সালে কৈয়ামসাইল-কায়েতপাড়া মৌজায় দশমিক ৫৭ একর জমির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি পান আছাদুজ্জামানের স্ত্রী। একই বছরে আবার সেই জমি বিক্রিও করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অন্তত দু’টি কোম্পানির অংশীদার আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা। এর মধ্যে একটি মৌমিতা ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান তিনি। আসাদুজ্জামান ডিএমপি কমিশনার থাকাকালীন রাজধানীর রুট পারমিট কমিটির প্রধান ছিলেন। সে সময় মৌমিতা পরিবহনকে রুট পারমিট দেয়া হয়।

শেপিয়ার্ড কনসোর্টিয়াম লিমিটেড নামে আরেকটি কোম্পানির চেয়ারম্যান আফরোজা জামান। এই কোম্পানির পরিচালক আছাদুজ্জামানের বড় ছেলে আসিফ শাহাদাত। এ ছাড়া আছাদুজ্জামানের এক শ্যালক নূর আলম ওরফে মিলন। তার নামে গাজীপুরের শ্রীপুরে দেড় একর জমি রয়েছে। ভাগ্নে কলমের নামেও গাজীপুরে জমি আছে দেড় একর। অথচ আজীবন গ্রামে থাকা মিলনের নির্দিষ্ট কোনো আয় নেই। অন্যদিকে ভাগ্নে কলমও গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বনে গেছেন কয়েক কোটি টাকা দামের জমির মালিক। এই কলম আবার আছাদুজ্জামানের গ্রামের বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক।

সিভিল সার্ভিস ক্যাডারের ৮৫ ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে যান।
পরে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০২২ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর তার নিয়োগের ৩ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। আছাদুজ্জামান মিয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩৩তম কমিশনার ছিলেন।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |